ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
টাকার পাহাড় গড়েছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা: সেলিমা রহমান ভারতে থাকার বৈধ মেয়াদ শেষ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে ভারতে ‘এক দেশ এক ভোট’ কি সত্যিই হবে পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়েই করাতে হবে, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না জাতিসংঘ অধিবেশন নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে ড. ইউনূসের বৈশ্বিক-আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জরুরি: বাইডেন ইলিশের দাম কমছে না কেন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৯

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ২৩৭ বার

হঠাৎ করে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন ভর্তি হয়েছে। এই মাসেই গড়ে প্রতিদিন ২৬ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বরে মাসে মারা গেছে চারজন। গত সাড়ে তিন মাসেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। এ বছরে গড়ে প্রতিদিন ১২ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোয়। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে ১২৩৭ জন বাসায় ফিরেছে। বাকি ৯৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ছেলে আমান মওদুদ মারা যান। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমানের অবস্থার অবনতি হলে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই মশার উপদ্রব আছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ সময়টাতে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আশা করছেন আগামী মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত রমনা ও ইস্কাটন, ধানমন্ডি, কলাবাগান, গুলশান, বনানী এলাকার বাসিন্দারাই ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত দু-তিন মাস থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় হঠাৎ করেই মশার প্রকোপ মারাত্মক আকারে বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। মশার কামড়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, মশার উপদ্রব বাড়লেও উত্তর বা দক্ষিণ কোন সিটি করপোরেশনে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না।
এ বিষয়ে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এবছর বৃষ্টি আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। কখনও হয় বা কখনও বন্ধ থাকে। এতে বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে। ফলে মশা ডিম পাড়ে। এই সময়ে এটা বেশি হয়। গত বছরের তুলনায় একটু বেশি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, এই মুহূর্তে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আগামী মাস থেকে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অতীতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। আস্তে আস্তে কমে এসেছে। তিনি বলেন, শুধু আমাদের দেশেই নয় ভারত ও পাকিস্তানেও ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, ১লা জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গুর উপস্থিতি তেমন থাকে না। এতে দেখা যায়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শূন্য, মার্চে ২ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং মে মাসে একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু মশার উপদ্রব বাড়ে জুন থেকে। সেই হিসাবে চলতি বছরের গত ১লা জুন থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সময়ে রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১৩৪০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে জুন মাসে ১৫ জন, জুলাই মাসে ১৫৬ জন, আগস্ট মাসে ৭২৭ জন এবং চলতি মাসে ৪৪৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ১২৩৭ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। চারজন মারা গেছে। সেন্ট্রাল হাসপাতালে জুন মাসে একজন, এ্যাপোলো হাসপাতালে জুলাই মাসে একজন এবং ইউনাইটেডে হাসপাতালে জুলাই একজন ও ১২ই সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একজন রোগী মারা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি আছে ৯৯ জন। এর মধ্যে বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে ৬৫ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে দুজন, ইউনাইটেডে হাসপাতালে সাতজন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চারজন, বারডেম হাসপাতালে একজন, হলি ফ্যামিলিতে নয়জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে একজন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজন, কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারজন, স্কয়ার হাসপাতালে ১১ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে সাতজন এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে নয়জন রোগী ভর্তি আছেন। অন্যদিকে আইইডিসিআর’র পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের গত ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছেন ৭২৭ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩৭ জন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার গতকাল মানবজমিনকে বলেন, সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। তবে, জুলাই ও আগস্ট মাসে বেশি থাকে। কারণ এই সময়ে বর্ষার পানি জমে। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পানি ৩ থেকে ৫ দিন একই স্থানে স্থির থাকলে সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব বেশি বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চারজন রোগী মারা গেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ছেলের মারা যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. আয়েশা আক্তার ‘নিউজে এসেছে’ উল্লেখ করে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার অবনতি হলে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা গেলে তারা সেটি হিসাবে রাখেন।
স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ভর্তি হয়েছে ৩৭৩ জন, কেউ মারে যায়নি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। ২০১১ সালে ১৩৬২ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন- এই সালে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎস ও কারণ: চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহী রোগ। এই রোগের উৎস এডিস মশা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত বর্ষার শুরুতে কিংবা শেষের দিকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। এডিস ইজিপটাই ও এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গ ভাইরাসবাহী মশাটি যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে।
চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশ ১৯৬৪ সালে সর্ব প্রথম ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়লেও ২০০০ সাল থেকেই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবদ্ধ পানি থেকে এই রোগের বাহক মশার উৎপত্তি। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা দিন দিন সচেতন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টাকার পাহাড় গড়েছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৯

আপডেট টাইম : ১২:৫২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হঠাৎ করে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন ভর্তি হয়েছে। এই মাসেই গড়ে প্রতিদিন ২৬ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বরে মাসে মারা গেছে চারজন। গত সাড়ে তিন মাসেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। এ বছরে গড়ে প্রতিদিন ১২ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোয়। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে ১২৩৭ জন বাসায় ফিরেছে। বাকি ৯৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ছেলে আমান মওদুদ মারা যান। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমানের অবস্থার অবনতি হলে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই মশার উপদ্রব আছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ সময়টাতে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আশা করছেন আগামী মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত রমনা ও ইস্কাটন, ধানমন্ডি, কলাবাগান, গুলশান, বনানী এলাকার বাসিন্দারাই ডেঙ্গু জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত দু-তিন মাস থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় হঠাৎ করেই মশার প্রকোপ মারাত্মক আকারে বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। মশার কামড়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, মশার উপদ্রব বাড়লেও উত্তর বা দক্ষিণ কোন সিটি করপোরেশনে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না।
এ বিষয়ে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এবছর বৃষ্টি আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। কখনও হয় বা কখনও বন্ধ থাকে। এতে বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে। ফলে মশা ডিম পাড়ে। এই সময়ে এটা বেশি হয়। গত বছরের তুলনায় একটু বেশি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, এই মুহূর্তে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আগামী মাস থেকে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অতীতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। আস্তে আস্তে কমে এসেছে। তিনি বলেন, শুধু আমাদের দেশেই নয় ভারত ও পাকিস্তানেও ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, ১লা জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডেঙ্গুর উপস্থিতি তেমন থাকে না। এতে দেখা যায়, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শূন্য, মার্চে ২ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং মে মাসে একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু মশার উপদ্রব বাড়ে জুন থেকে। সেই হিসাবে চলতি বছরের গত ১লা জুন থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সময়ে রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১৩৪০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে জুন মাসে ১৫ জন, জুলাই মাসে ১৫৬ জন, আগস্ট মাসে ৭২৭ জন এবং চলতি মাসে ৪৪৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ১২৩৭ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। চারজন মারা গেছে। সেন্ট্রাল হাসপাতালে জুন মাসে একজন, এ্যাপোলো হাসপাতালে জুলাই মাসে একজন এবং ইউনাইটেডে হাসপাতালে জুলাই একজন ও ১২ই সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একজন রোগী মারা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি আছে ৯৯ জন। এর মধ্যে বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে ৬৫ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে দুজন, ইউনাইটেডে হাসপাতালে সাতজন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চারজন, বারডেম হাসপাতালে একজন, হলি ফ্যামিলিতে নয়জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে একজন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজন, কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারজন, স্কয়ার হাসপাতালে ১১ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে সাতজন এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে নয়জন রোগী ভর্তি আছেন। অন্যদিকে আইইডিসিআর’র পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের গত ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছেন ৭২৭ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩৭ জন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার গতকাল মানবজমিনকে বলেন, সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। তবে, জুলাই ও আগস্ট মাসে বেশি থাকে। কারণ এই সময়ে বর্ষার পানি জমে। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পানি ৩ থেকে ৫ দিন একই স্থানে স্থির থাকলে সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব বেশি বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চারজন রোগী মারা গেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ছেলের মারা যাওয়া প্রসঙ্গে ডা. আয়েশা আক্তার ‘নিউজে এসেছে’ উল্লেখ করে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার অবনতি হলে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা গেলে তারা সেটি হিসাবে রাখেন।
স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ভর্তি হয়েছে ৩৭৩ জন, কেউ মারে যায়নি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। ২০১১ সালে ১৩৬২ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন- এই সালে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎস ও কারণ: চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহী রোগ। এই রোগের উৎস এডিস মশা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত বর্ষার শুরুতে কিংবা শেষের দিকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। এডিস ইজিপটাই ও এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গ ভাইরাসবাহী মশাটি যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে।
চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশ ১৯৬৪ সালে সর্ব প্রথম ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়লেও ২০০০ সাল থেকেই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবদ্ধ পানি থেকে এই রোগের বাহক মশার উৎপত্তি। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা দিন দিন সচেতন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসছে।